বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যাকান্ড এবং ন্যায় বিচারের বর্তমান প্রেক্ষাপট !!!

লিখেছেন লিখেছেন হিমেল সাহেব ১৭ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:১৮:৫৭ বিকাল

বাংলাদেশের আইনগুলো হল ছেঁড়া জালের মতো যার অধিকাংশই ফাঁক ফোকরে ভরা । যার কারণে ছোট ছোট অপরাধীরা খুব সহজেই এই ফাঁক দিয়ে বের হয়ে আসে , আর বড় অপরাধীরা এই জাল ছিড়ে বের হয়ে আসে ।

আইন প্রনয়নের সময় এই ফাকগুলো ইচ্ছে করেই রাখা হয় , যেন আইন প্রণেতারা কখনও এই জালে আটকে গেলে , সেই ফাঁক দিয়ে বের হয়ে আসতে পারে । যাইহোক আইনের এই ফাঁকফোকরের পূর্ণ সদ্বব্যবহার আমাদের দেশে হচ্ছে । এইজন্যই অপরাধীরা বার বার অপরাধ করেও ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে । পরবর্তীতে তারা আবার অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে ।

আর এদেশের বিচার বিভাগকে লোকাল বাসের সাথে তুলনা করা যেতে পারে । বিচার প্রক্রিয়া একবার শুরু হলে , এর নিষ্পত্তি কবে হবে এটা কেউ বলতে পারে না । যদি কেউ সাধারণ আদালতে কোন অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা করে , তাহলে সেই মামলার বিচার দেখে মরতে পারা তার জন্য ভাগ্যের বেপার । বেপারটা এমন যেন , অপরাধীর চেয়ে অভিযোগকারীর হয়রানীই বেশী । কোর্টে আর উকিলের চেম্বারে দৌড়াতে দৌড়াতে তার জীবন শেষ হয়ে যায়, ধানের জমি শেষ হয়ে যায়, গোয়াল ঘরের গরু শেষ হয়ে যায় ,পকেটের টাকা শেষ হয়ে যায়, কিন্তু মামলাতো শেষ হয় না । এজন্যই সচারচর কেউ মামলা করতেও ভয় পায় । এই হল আমাদের বিচার বিভাগের একটি তুলনামূলক চিত্র । তবে জনগনকে গেইটলক বাসের সার্ভিস দেয়ার জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল গঠন করা হয়েছে । তাতে কি হয়েছে ...... “যেই লাউ সেই কদুই “ ।

অপরাধ নিয়ন্ত্রন এবং বৃদ্ধি ... এই দুই ক্ষেত্রেই পুলিশের ভুমিকা খলনায়কের মতো। অপরাধী গ্রেপ্তারে এদেশের পুলিশের ভুমিকা হল বাংলা সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতো । ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর এরা আসে। যদি প্রকাশ্য দিবালোকে , সবার চোখের সামনে কেউ খুনও হয় , পুলিশের সাধারণ ডায়েরীতে এই অপরাধীদের নাম উঠে কতিপয় “দূর্বৃত্ত “ অথবা “দূষ্কৃতিকারী “হিসেবে “। এই “ দূষ্কৃতিকারী” শব্দটি দিয়ে আসলে প্রকৃত অপরাধীদের নাম আড়াল করার চেষ্টা করা হয় । এরপর চার্জশীট গঠনের পরবর্তী তদন্তের রিপোর্টে “ দূষ্কৃতিকারী “ শব্দটির জায়গায় “জজ মিয়া“ দের নাম বসিয়ে দেয়া হয় । আর প্রকৃত অপরাধীরা অধরাই থেকে যায় ।

এই অপরাধীরা কয়েকদিন গা ডাকা দিয়ে থেকে আবার তাদের কার্যক্রম শুরু করে । এরপর একদিন আবার পত্রিকায় খবর আসে কতিপয় দূর্বৃত্তের ধারালো চাপাতির আঘাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খুন হয়েছেন । পুলিশ এখনো এই হত্যাকেন্ডের কারণ জানতে পারেনি । তবে সন্দেহভাজন চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে । এই মামলার ভার সি.আই.ডি. কে দেয়া হয়েছে । ( তবে সি.আই.ডি. যে কি চুল ছিড়তে পারবে এটা সাধারন মানুষের জানা আছে) ।

এরপর চারদিকে শুরু হয় মিছিল, আন্দোলন , বিক্ষোভ , প্রতিবাদ সমাবেশ ইত্যাদি । ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মীরা রাজপথে নেমে আসে বিচারের দাবিতে । এরপর একসময় এই আন্দোলন , প্রতিবাদ সমাবেশ স্তমিত হয়ে আসে , যে যার যার মত কাজে ফিরে যায় । সময়ের আবর্তনে পরবর্তী বছর চলে আসে , আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে প্রয়াত স্যারের স্মরনে আলোচনা অনুষ্ঠান ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় । অনুষ্ঠানে বক্তারা স্মৃতিচারন করেন । এরপর আলোচনা অনূষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় । এভাবেই একজন মানুষ গড়ার কারিগর , জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান , প্রগতিশীল ব্যক্তির জীবনের সমাপ্তি ঘটে যায় ।

আর অন্যদিকে পুলিশ অপরাধীদের ধরার জন্য জান প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করে কিন্তু অপরাধীদের ধরতে পারে না । অপরাধীদের ধরতে না পারাটা একটা রহস্য (মাঝে মাঝে )। আবার ধরতে পারলেও এদের বিচার হয়না । আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যায় । আবার বিচার হলেও তা কার্যকর হয়না ।যখন আইনের শাসন থাকে না , তখন অপরাধীরা আরও উদ্বুদ্ধ হয় ।কারণ বারবার একই ধরণের অপরাধ করেও এরা পার পেয়ে যায় । যেমনঃ

# ২০০৪ সালের ২৪শে ডিসেম্বর ২৪ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় । এই মামলার রায় এখনও হাইইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ।

# ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি খুন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুতত্ত ও খনিজ বিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড.এস তাহের । তার মামলার রায়ের বিরুদ্ধে করা আপীল এখনও শুনানীত্র অপেক্ষায় আছে ।

আর গত শনিবার খুন হলেন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম । এ নিয়ে গত এক দশকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন জন শিক্ষক খুন হলেন ।

এই ধরনের হত্যাকান্ড যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে , সেইজন্য সরকারকে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে । এই হত্যাকান্ড সহ , পূর্ববর্তী সব হত্যাকান্ডের বিচার এবং রায় কার্যকর করতে হবে । নয়তো এই সংখ্যা তিন থেকে ছয় এ পৌছাতে বেশী সময় লাগবে না । আইনের সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে ।

যে সব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী প্রফেসর শফিউল ইসলামের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আমি তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জানাচ্ছি । খুনীর কোন জাত নেই , খুনীর কোন ধর্ম নাই । এরা তথাকথিত ইসলামী দলের সাথে যুক্ত থাকলেও এরা প্রকৃত মুসলমান নয়, এরা খুনী । বিসমিল্লাহ বলে খুন করলেই হালাল হয়ে যায় না ।

বিষয়: বিবিধ

৯৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File